Home > Uncategorized > জন্মদিন ভাবনাঃদ্বাবিংশে পদার্পণ

জন্মদিন ভাবনাঃদ্বাবিংশে পদার্পণ

অনেকদিন ধরে কোন ব্লগে লেখালেখি করা হয়না, একসময় প্রথম আলো ব্লগে একটা ছদ্যনামে নিয়মিত লিখতাম, পরে বিভিন্ন কারণে আর লেখা হয়ে উঠেনি। আজকে অনেকদিন পরে আবার ব্লগে টাইপ করছি , শুধুমাত্র একান্ত নিজের কিছু অভিভঙ্গতা প্রকাশ করার জন্য একান্ত নিজের ভঙ্গিতে ।

প্রথমে বলি এই ব্লগটার নামকরণ নিয়ে, স্বভাবতই  একুশ নম্বরটা আমার খুব প্রিয়, এই কারণে এই ব্লগের পিছনে একুশ নাম্বারটা দেয়া ।একুশতম বছরের প্রথমদিন ব্লগটা খুলেছিলাম, আর লেখছি আজ শেষ দিনে।  আজকের লেখার মুল প্রসঙ্গে আসি এবার।

প্রসঙ্গ জন্মদিন

ছোটবেলায় জন্মদিন শুনলে মনে হত, এটা বড়লোকের জিনিস,যাদের  টাকা পয়সা বেশি শুধুমাত্র তারাই করে। আমার পরিবারে আমি কখনও কাঊকে জন্মদিন পালন করতে দেখিনি,এমনকি আমি জানিওনা আমার বাবা, মা অথবা আমার বড়বোনের জন্মদিন কবে। তবে আমার ছোটভাইয়ের টা জানি, কারণ ওর যখন জন্ম হয় তখন আমি একটু বড় । যাই হোক এসব কারণে আমার নিজের কখনও জানারও আগ্রহ ছিলনা আমার জন্মদিন আসলে কবে । তবে কলেজে উঠে একবার  খুবি আগ্রহ হলো জানার আসল ডেটটা কবে। শেষে আব্বাকে জিঙ্গাসা  করে অনেক খুঁজে বাংলা দিনটা বের করলাম, সেই অনুযায়ী পুরাতন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইংরেজী দিনটাও খুঁজে  বের করলাম।এটা বলা যাবেনা যে আমার বাবা, মার কোন দোষ আছে ডেটটা না মনে রাখার জন্য, কারণ তারা নিজেরাও কখনও জন্মদিন পালন করেনি।  জানার পরেও যেহেতু  জন্মদিন পালনের ট্রেন্ড ছিলনা তাই কখনো পালন করা হয়নি । আর বেশিরভাগ সময়ে আমার মনেই থাকতোনা আজ আমার জন্মদিন।  ভার্সিটিতে এসে অনেকের ধুমধাম  সহকারে জন্মদিন পালন করা দেখলাম, এখনও দেখে যাচ্ছি। আমি যেহেতু নিজে পালন করিনা, তাই আমি খুব কমি এসব এটেন্ড করার চেষ্টা করি। স্কুলে থাকতে এক বান্ধবীর জন্মদিনে দাওয়াত গ্রহণ না করায় ও আমার সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছিলো, এটা অবশ্য মনে আছে। তাই কয়েকবার বন্ধুদের চাপাচাপিতে যেতে হয়েছে অনেক কয়বার, আমিও একবার কয়েকজন খুব কাছের বন্ধুকে খাইয়ে দিয়েছিলাম। কারণ একটাই খালি অন্যের খেয়ে বেড়ালে তো আর হবেনা, এই ধারণা থেকে। যাই হোক, পরে আমার জন্মদিন সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন আমার মনে হয়না যে শুধু বড়লোকেরা জন্মদিন পালন করে বা  করা উচিত। জন্মদিন আমার সম্পর্কে আমার বর্তমান ধারণা মোটামুটি এরকম ,

  • যান্ত্রিক জীবনে আসলে আমাদের আসলে নিজেদের কখনও যাচাই করার সময় হয়না, আমরা কখনই নিজের অস্তিত্ব বা উপলব্ধি নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ পাইনা। জন্মদিন আসলে এ সুযোগটা করে দেয়।
  • জন্মদিন মনে করিয়ে দেয় দুনিয়াতে আমার সময় আরও এক বছর কমে গেল, এখন যা করার তা খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। সবারই কিছু না কিছু নিজস্ব লক্ষ্য থাকে জীবনের কাছে, সেগুলি পুরণ করার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে।
  • সর্বোপরি জন্মদিন শত দুঃখ কষ্টের মাঝে জন্মদিন মানুষকে একটু খুশি হওয়ার সুযোগ করে দেয় ।

যাই হোক এটা ছিল জন্মদিন নিয়ে আমার অনভুতি। আমার পরিবারে এখন পালন না হলেও আমার পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে অবশ্যই পালন  করা হবে আশা করছি ।

এই লেখাটা এই মূহুর্তে লেখার কারণ বছর ঘুরে আবারও সেই দিনটি ফিরে এসেছে আমার জীবনে, ভাবতেই অবাক লাগে, আজ থেকে আমি দ্বাবিংশে পদার্পণ করছি । দ্বাবিংশে পদার্পণ আমাকে আরও জানান দিচ্ছে যে আমি আজ পরিণত হয়েছি, বিশাল এক অতিকায় হাতির মানরুপে।

আগেই বলেছিলাম প্রতিটি মানুষের নিজের একান্তই কিছু চাওয়া থাকে জীবনের কাছে, আজও সেগুলো পুরণ করা হয়নি, এমনকি সেগুলোর ধারে কাছে যেতেও পারিনি । আরও মনে পড়ছে আসলে বিশালাকায় হাতিরা যতি ভালো কাজ করুক তাদের বিশালাকায় গড়নটাই সবার আগে চোখে পড়ে । তাই আমি যে কাজি করিনা,যেখানেই থাকিনা কেন আমি একটা বিশালাকায় হাতি। তাই আমাকে কেঊ কখনও ভালবাসবেওনা, আর সত্যি কথা বলতে আমি কখনওনা আমি কখনও ভালবাসা নিয়ে চিন্তাও করিনি। যদিও মাঝে মাঝে মনের ভেন্টিলেটর দিয়ে ঊকি দিয়েছিল, কিন্তু এত বড় শরীর কি তাতে টের পায় ।

জ়ীবন নিয়ে চিন্তা মনে হয় আমার বয়সের অন্য কারো চেয়ে আমিই সবচেয়ে বেশি করি, আর তাই আমার কাছে আমার একাকীত্বকে মাঝে মাঝে সম্পদ মনে হয় । যদিও গত কয়েক মাসে নানাবিধ ব্যস্ততায় তা হারিয়ে ফেলতে বসেছিলাম, কিন্ত তা আবার ঠিক সময়ে ফিরে পেয়েছি।

ধন্যবাদ সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তাআলাকে একুশটা বছর বাঁচিয়ে রাখার জন্য, যদিও একসময় মনে হত আমি তা ডিসার্ভ করিনা, কিন্তু এখন মনে হয় আসলে আমার জন্যে না হলেও আমার পারিপার্শ্ব অর্থাৎ আমার বাবা মার জন্য আমাকে বাঁচার দরকার । তারা আমার উপর অনেক আশা নিয়ে বসে আশে, আমার ইঞ্জিনিয়ার হবে জীবনে অনেক বড় কিছু করবে।ইঞ্জিনিয়ারিং এর কথা বলতেই মনে পড়ে গেল আমি এখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শেষ বর্সে পদার্পণ করেছি, আর মাত্র কয়েকমাস পড়ে আমাকে ছড়িয়ে পড়তে হবে দুর্ধর্ষ পৃথিবীর মাঝে। বুকে এক গাথা ভয় এসে ধাক্কা দিল, যাই হোক এই ছিল বহুদিন পরে আমার কিছু আজে বাজে লেখা। কাঊকে বলতে না পেরে লিখেই ফেললাম, পড়ে থাক ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের এক কোনায়। দ্বাবিংশের দিনগুলি কাটাতে নিজের মত করে জীবনকে সাজ়িয়ে, জানিনা কতটুকু পারব, তবে একটু না একটূ চেষ্টাতো করব ।

Categories: Uncategorized
  1. No comments yet.
  1. No trackbacks yet.

Leave a comment